স্বদেশ ডেস্ক:
পুলিশে কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হওয়া সেই আসপিয়া ইসলাম কাজলের পরিবারের নিজস্ব জমির সন্ধান মিলেছে। বরিশালের হিজলায় বসবাস করলেও তাদের গ্রামের বাড়ি মূলত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদে। আর সেখানেই রয়েছে পৈতৃক সম্পত্তি। পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও ‘ভ‚মিহীন’ তথ্য দেওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যায় আসপিয়ার চাকরি। আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হিজলায় নিজেদের জমি না থাকায় চাকরি হয়নি বলে জানান ওই তরুণী। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়। ক্ষোভ জানান নেটিজনরা। ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে পিতৃহারা ওই তরুণীর পরিবারকে জমি, ঘর ও পুলিশের চাকরি দেওয়ার নির্দেশ আসে।
আসপিয়ার চাচা মোশাররফ হোসেন জানান, আসপিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম দুই বছর আগে মারা যান। তিনি ছিলেন চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদের বাসিন্দা মৃত মকবুল হোসেন মাতাব্বরের ছেলে। মকবুল হোসেন ৮৪ শতাংশ জমি রেখে গেছেন। পৈতৃক সূত্রে ওই জমির ১০ শতাংশের মালিক আসপিয়ারা। তবে দীর্ঘদিন ধরে তারা হিজলায় বসবাস করায় ওই সম্পত্তির কোনো খোঁজ নেয়নি। মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘ওরা বাড়িতে খুব একটা আসে না। সর্বশেষ পাঁচ মাস আগে আসপিয়ার মা ঝরনা বেগম এসেছিলেন বড় ভাবির মৃত্যুতে। এক বছর আগে মেজো ভাবির মৃত্যুতেও এসেছিলেন। এ ছাড়া শফিকুল বেঁচে থাকতে এক-দুই বছর পরপর এক-দুই দিনের জন্য বাড়িতে আসত।’
জানা যায়, হিজলা উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শফিকুল ইসলাম ও ঝরনা বেগম দম্পতি। সেখানেই জন্ম হয় আসপিয়ার। ২০১৯ সালে শফিকুলের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে আসপিয়া ও তার পরিবার হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুর ইউনিয়নে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। মৃত্যুর পর শফিকুলকে অবশ্য দাফন করা হয় পারিবারিক জমিতেই। সেখানে আসপিয়া ও তার মায়ের যাওয়া-আসাও আছে নিয়মিত। এ ব্যাপারে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার বড় ভাই আমির হোসেন মাতাব্বর বরিশালের হিজলা উপজেলা গণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ছিলেন। সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে শফিকুলও থাকত। ১৯৯০ কিংবা ১৯৯১ সালে বড় ভাই বদলি হয়ে পিরোজপুরে যান। সেখানেই ঝরনা বেগমের সঙ্গে শফিকুলের পরিচয় হয়। পরিবারের অমতে তারা দুজনে হিজলায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। আমার ভাইটাও ছিল জেদি প্রকৃতির। বাবা তাদের বিয়ে মেনে নিলেও সে আর পরিবারে ফিরে আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শফিকুল পরে হিজলা উপজেলা সদরের মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর সমিল, রাইচ মিলে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত। ২০১৯ সালে সে মারা যায়। এর পর থেকে ঝরনা বা ওর সন্তানদের প্রতি এখন আর কোনো রাগ নেই। আমার রাগ তো ছিল ভাইয়ের ওপর। এখন সর্ম্পক স্বাভাবিক। তবে ওরা বাড়িতে তেমন আসে না বা যোগাযোগও তেমন নেই। এখনো অপু চৌধুরীর বাড়িতে বিনাভাড়ায় থাকে বলে শুনেছি।’
হিজলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ঝন্টু বেপারি বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম অত্যন্ত পরিশ্রম করে সততার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন। ২০১৯ সালে বাজারের কাছেই জমি কেনার জন্য কথা ঠিক হয়েছিল। টাকা জমা দেওয়ার কয়েকদিন আগেই হঠাৎ মারা যান তিনি।’ চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আসপিয়াদের দাদার বাড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডে। শফিকুল বিয়ে করে হিজলাতেই থেকে যান। খুব একটা বাড়িতে আসতেন না। তবে লোক ভালো ছিলেন। তিনি মারা গেলে তাকে তার গ্রামের বাড়িতেই কবর দেওয়া হয়।’
আসপিয়া ইসলাম বলেন, ‘হিজলায় আমাদের কোনো জমি নেই, বাবা আমাদের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেননি। আর যদি রেখেও গিয়ে থাকেন আমাদের বলতে পারেননি। আমাদের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ভোলা, সেখানে কারও সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। ফলে সেখানে আমাদের কিছু আছে কিনা, তাও জানা নেই। আর সেখানকার কোনো সম্পত্তি আমাদের ভোগদখলেও নেই।’ আসপিয়া অবশ্য বলেন, ‘চরফ্যাশনে নয়, আমরা হিজলা উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েই থাকতে চাই।’
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুলচন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘আসপিয়াদের জন্য ঘর ও জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান।’ তাদের নামে চরফ্যাশনে জমি আছে এমন তথ্যের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে, হিজলায় তারা ভ‚মি মালিক নন। এখন কোথাও জমি থাকার সত্যতা পাওয়া গেলে, সরকারি জমি ও ঘর হস্তান্তর করা যাবে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’